শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৫ ১৪৩০   ১৯ রমজান ১৪৪৫

শিশুদের মানসিক শক্তি বাড়ায় প্রকৃতি!

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ০৪:৫৮ পিএম, ২৮ জানুয়ারি ২০১৯ সোমবার

সম্প্রতি বিজ্ঞানীদের গবেষণা প্রাপ্ত এক প্রতিবেদনে পাওয়া যায়, শিশুদের সঙ্গে প্রকৃতির এক দারুণ বন্ধন। প্রকৃতির কাছাকাছি থাকা শিশুগুলো থাকে প্রাণবন্ত আর উচ্ছল।

প্রতিবেদনে বিজ্ঞানীরা জানায় প্রকৃতি শিশুদের মানসিক উত্তেজনা উপশম করে। বাড়ায় মানসিক স্বাস্থ্য। যেটি শিশুকে করে তুলে শান্ত। বিজ্ঞানীরা বলেন, একটা সময় আসে যখন শিশুরা হতাশায় ভুগে অথবা মানসিক চাপে কাটায় কখনো আচরণগত সমস্যায় ভুগে। এ সব কিছুরই সমাধান বুঝি প্রকৃতি? আপনি যদি আপনার শিশুকে নিয়ে খুব চিন্তিত বা হতাশাগ্রস্ত থেকে থাকেন, তাহলে চলুন জানি গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়টি নিয়ে।

বর্তমানে অনেক বাবা-মা’ই শিশুদের অতিরিক্ত নগরায়নে ঝুকে পড়া নিয়ে চিন্তিত। তারা ধারণা করছে যে এতে করে একটি স্বাভাবিক শিশুর পরিপূর্ণ বৃদ্ধি বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা বলেন, অভিভাবকরা এ সম্পর্কে মোটামুটি একটি সঠিক ধারণা করতে পেরেছেন। সম্প্রতি ডাক্তার থেকে শুরু করে মনোবিজ্ঞানীরা শিশুদের এ ঘটনা নিয়ে নানা ধরণের গবেষণা করতে শুরু করেছেন। অনেক প্রকৃতি বিষয়ক সংগঠন ও ইতোমধ্যে শিশুদের সঙ্গে প্রকৃতির যোগাযোগের মিলবন্ধন খুজতে আরম্ভ করেছেন। এর-ই মধ্যে, দ্য ওয়ার্ল্ড হেলথ ওর্য়াগানাইজেশন (WHO) একটি বৈজ্ঞানিক প্রমাণ স্বরূপ শিশুদের সঙ্গে সবুজ প্রকৃতির উপকারের তথ্য উদঘাটন করতে পেরেছে। দ্য হেলথ ওর্য়াগানাইজেশন পরামর্শ দেয় প্রতিটি শিশুর আশেপাশের আঙিনার ৩০০ মিটারের ( ১০০০ ফিট ) মধ্যে সবুজ প্রকৃতি থাকা বাধ্যবাধক। যাতে করে শিশু তার কিছু মূহুর্ত খেলার ছলে প্রকৃতির সঙ্গে কাটাতে পারে। কিন্তু এমন হাজারো শিশু আছে যাদের আশেপাশে কোথাও ও প্রকৃতির ছোঁয়া নেই।

ইউনিভার্সিটি অব হংকং এর বায়োলজিক্যাল সায়েন্সের শিক্ষক তানজা সোবকো বলেন, ইদানিং বেশ কিছু অভিভাবকদের মধ্যে এক ধরণের প্রবণতা দেখা যায় যে, তারা প্রকৃতিকে শিশুদের মধ্যে আবর্জনা হিসেবে উপস্থাপন করে। শিশুদের প্রকৃতির মাঝে মিশে থাকতে দিতে চায় না। যে কারণে শিশুরাও ছোটবেলা থেকেই প্রকৃতি সম্পর্কে একটি নেতিবাচক ধারণা নিয়ে বড় হতে থাকে। যার ফলে তারা কখনো সবুজ গাছপালা নির্মূল করতে পিছপা হন না। শিশুরা এ নিয়ে কিছু ভাবেনা। অথচ এটি পরোক্ষভাবে স্বয়ং শিশুটির ভীষণ ক্ষতি করে যাচ্ছে।

শুধুমাত্র শিশুদেরই না। অভিভাবকদের ও। সোবকো ও তার সহকর্মীরা অভিভাবকদের জন্য একটি পরীক্ষার আয়োজন করে যেখানে ১৬ ধরণের প্রশ্ন তৈরী করা হয় শিশুদের মধ্যে প্রকৃতির প্রভাব নিয়ে। এর পরীক্ষা কেন্দ্রীভূত ছিলো চারটি দিক দিয়ে। প্রথমটি শিশুদের প্রকৃতি উপভোগ, প্রকৃতির প্রতি সহমর্মিতা, প্রকৃতির প্রতি দায়িত্ববোধ ও প্রকৃতির প্রতি সাবধানতা।

তারা প্রায় ৪৯৩ টি পরিবারের ওপর এই পরিক্ষন চালায় যে পরিবারগুলোর শিশুদের বয়স ছিলো দুই থেকে পাঁচ বছরের কাছাকাছি। অত্যন্ত সফল এই পরীক্ষার পর দেখা যায় যেসব শিশু ছেলে-মেয়েরা প্রকৃতির সান্নিধ্যে বেড়ে উঠার সুযোগ পেয়েছে তারা মানসিকভাবে ততোটা স্থির আর বুদ্ধিমান। কোনো ধরণের প্রতিবন্ধকতা নির্বিঘ্নে সে শিশুরা বড় হতে পারছে। অন্যদিকে অতিরিক্ত প্রযুক্তি নির্ভর বা নগরায়নে বেড়ে উঠা শিশুরা অত্যন্ত কম বয়সেই মেজাজ তিরিক্ষ হয়ে উঠছে। মানসিক ভাবে অস্থির ও বেপরোয়া হয়ে উঠছে।

যেসব অভিভাবকরা শিশুদের প্রকৃতির প্রতি মমতাবোধ শিখায় তাদের ছেলে-মেয়েগুলো ভেতর থেকে প্রকৃতির যেকোনো জীবের প্রতি নম্রতা আর মমত্ববোধ নিয়ে বেড়ে উঠে। এতে বাড়ে শিশুদের সমাজের প্রতি দায়িত্ব এবং প্রকৃতির প্রতি সমান দায়িত্বশীলতা। বর্তমান এ সময়ে হঠাৎ করেই শিশুদের মানসিক দূর্বলতা দেখা দিতে শুরু করেছে।

একটি গবেষণায় পাওয়া যায় ১ থেকে ১০ বছরের শিশুদের মানসিক সমস্যা উল্লেখযোগ্য ভাবে প্রখর হয়ে উঠছে। গত বছর চীনের এক প্রতিবেদনে পাওয়া যায় সে দেশের শতকরা ২২ ভাগ প্রি-স্কুল শিশু এ ধরণের মানসিক সমস্যায় ভোগে। গবেষকরা বলেন, এ ক্ষেত্রে শিশুদের সবচাইতে বেশি সাহায্য করতে পারে প্রকৃতি। প্রকৃতির উদারতা আর সবুজ নির্মলতা একটি শিশুর মানসিক ভারসাম্য পরিপূর্ণ ভাবে ঠিক রাখতে পারে।