বৃহস্পতিবার   ২৩ মার্চ ২০২৩   চৈত্র ৮ ১৪২৯   ০১ রমজান ১৪৪৪

সর্বশেষ:
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিলেন লুলা যে কোনো দিন খুলবে স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু টানেল শীতে কাঁপছে উত্তরাঞ্চল দেশে করোনার নতুন ধরন, সতর্কতা বিএনপির সব পদ থেকে বহিষ্কার আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়া নৌকার প্রার্থীর পক্ষে মাঠে কাজ করবো: মাহিয়া মাহি মর্মান্তিক, মেয়েটিকে ১২ কিলোমিটার টেনে নিয়ে গেল ঘাতক গাড়ি! স্ট্যামফোর্ড-আশাসহ ৪ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত বর্ষবরণে বায়ু-শব্দদূষণ জনস্বাস্থ্যে ধাক্কা কোনো ভুল মানুষকে পাশে রাখতে চাই না বাসস্থানের চরম সংকটে নিউইয়র্কবাসী ট্রাকসেল লাইনে মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্ত একাকার! ছুটি ৬ মাসের বেশি হলে কুয়েতের ভিসা বাতিল ১০ হাজার বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত চুক্তিতে বিয়ে করে ইউরোপে পাড়ি আইফোন ১৪ প্রোর ক্যামেরায় নতুন দুই সমস্যা পায়ের কিছু অংশ কাটা হলো গায়ক আকবরের ১৫ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ১০০ কোটি ডলার নারী ফুটবলে দক্ষিণ এশিয়ার চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে আবার বাড়লো স্বর্ণের দাম
১০৪

মার্কিন রাষ্ট্রদূতের ওপর হামলা প্রচেষ্টায় উদ্বেগ প্রকাশ

প্রকাশিত: ২৪ ডিসেম্বর ২০২২  

প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমকে ডেপুটি স্টেট সেক্রেটারি শারম্যানের ফোন

      
মনোয়ারুল ইসলাম
ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের ওপর হামলা প্রচেষ্টায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমকে সরাসরি ফোন করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের ডেপুটি সেক্রেটারি উইন্ডি শারম্যান। তিনি বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য আবারও তাগিদ দিয়েছেন।  গতকাল বৃহস্পতিবার তাদের মধ্যে এই টেলি সংলাপ অনুষ্ঠিত হয় বলে স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র নেড প্রাইস এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন।
বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠ নির্বাচনের আয়োজন, ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের স্টাফদের নিরাপত্তা জোরদার ও দু’দেশের সম্পর্ক সুদৃঢ় করাই ছিল আলোচনার মূল বিষয়। ডেপুটি সেক্রেটারি অব স্টেট উইন্ডি শারম্যান নিজেই এ ফোনটি করেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমকে। বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন ও তার পরিবেশ তৈরি নিয়ে তারা আলোচনা করেন। তবে তাদের আলোচনায় গত ১৪ ডিসেম্বর ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের ওপর হামলা প্রচেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ ও দূতাবাসের স্টাফদের নিরাপত্তার বিষয়টি অধিক গুরুত্ব পায় বলে মুখপাত্র জানিয়েছেন।
দু’দেশের সম্পর্ক নিয়ে এর আগে উইন্ডি শারম্যান ও শাহরিয়ার আলম আর এক দফা এমন সরাসরি আলোচনা করেছিলেন গত ৭ অক্টোবর। এ বৈঠকেও মার্কিন ডেপুটি সেক্রেটারি বাংলাদেশে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা, শান্তিপূর্ণ উপায়ে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের ওপর গুরুত্ব দিয়েছিলেন।
এদিকে গত ১৫ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহম্মদ ইমরানকে তলব করেছিল। তারা জানতে চেয়েছিল বাংলাদেশ সরকার কেন  কূটনীতিকদের  প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। হামলার সাথে জড়িতদের ব্যাপারে সরকার কি পদক্ষেপ নিয়েছে তাও জানতে চায় তারা। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন অবশ্য ঢাকায় বলেছেন, রাষ্ট্রদূত ইমরানকে তলব করা নয়। দু’দেশের মধ্যকার কিছু বিষয় নিয়ে তারা আলোচনায় বসেছিলেন।
এদিকে ঢাকা থেকে ‘আজকাল’-এর প্রতিনিধি মাসুদ হোসেন জানাচ্ছেন, বাংলাদেশে আগামী সাধারন নির্বাচন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকদের নিরাপত্তা নিয়ে ঢাকার ওপর প্রচন্ড চাপ সৃষ্টি করেছে ওয়াশিংটন। যুক্তরাষ্ট্রের তরফে বারবারই অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ^াসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানানো হচ্ছে। তবে তাদের এই প্রত্যাশার বিষয়টি সরকারের সঙ্গে গোপনে না বলে প্রকাশ্যে বলায় সরকার এটাকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতির ওপর হস্তক্ষেপ বলে বিবেচনা করছে। অপরদিকে, সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগজনক পরিস্থিতির মুখে পড়েছিলেন। তারপর থেকে ওয়াংশিটন ঢাকায় ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। তাদের কূটনীতিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায়।
বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের উপ পররাষ্ট্র মন্ত্রী ওয়েন্ডি শারম্যান টেলিফোনে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোঃ শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে নির্বাচন এবং যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকদের নিরাপত্তার বিষয়ে আলোচনা করেন। ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে যে, ডেপুটি সেক্রেটারি শারম্যান এবং প্রতিমন্ত্রী আলম দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের পারস্পরিক অগ্রাধিকারসমূহ নিয়ে আলোচনা করেছেন। অপরাপর বিষয়ের মধ্যে তারা কূটনৈতিক সম্পর্কের ওপর ১৯৬১ সালের ভিয়েনা কনভেনশন নিয়ে আলোচনা করেন। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী পুনরায় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন যে, বাংলাদেশে কূটনীতিক সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে বাংলাদেশ বদ্ধপরিকর। তিনি আরও বলেন যে, রাষ্ট্রদূতদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয় জেনে নেয়া ভাল। প্রতিমন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্রদূতদের কোনও মন্তব্য করার আগে বাংলাদেশের ইতিহাস জেনে নেয়া ভাল।  
ডেপুটি সেক্রেটারি শারম্যান বাংলাদেশে একাধিক সফরের বিষয় উল্লেখ করেন। সম্প্রতি ইউএনএইচসিআর নির্বাচনে বাংলাদেশের জয়ের বিষয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানান। আন্তর্জাতিক ফোরামে একে অন্যের প্রতি সমর্থন জানানোয় সন্তোষ প্রকাশ করেন। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এ সময় ডেপুটি সেক্রেটারিকে হ্যাপি ক্রিস্টমাস এবং নিউ ইয়ার জানান। তার জবাবে ওয়েন্ডিও শুভেচ্ছা জানান। এই টেলিফোন আলাপের বিষয়টি ১২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিলো। পরবর্তি সময় তা নতুন করে কর্মসূচি নির্ধারিত হয়।
এদিকে, মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র নেড প্রাইস বলেছেন, ‘ডেপুটি সেক্রেটারি অব স্টেট ওয়েন্ডি শারম্যান আজ ফোনে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে কথা বলেন। ডেপুটি সেক্রেটারি এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্ক জোরদার, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের গুরুত্ব এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের ব্যাক্তিবর্গের নিরাপত্তার গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেন’।
বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্কের সঙ্গে জড়িত একজন উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা আজকালকে বলেছেন, তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতিদিনই যুক্ত আছেন। ফলে সম্পর্কের মধ্যে যাতে দূরত্ব কিংবা ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হতে না পারে সে বিষয়ে তারা খুবই সতর্ক। কারণ অতীতে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ না থাকার কারণে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেবার আগে যুক্তরাষ্ট্র র‌্যাবকে সহায়তা বন্ধ করে সতর্ক করেছিলো। কিন্তু তখন কেউ পাত্তা দেয়নি। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা জারির পর টনক নড়েছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক জোরদারের সুযোগ রয়েছে। সেই সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। এক্ষেত্রে, তাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করে চলা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।
ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস গত ১৪ই ডিসেম্বর রাজধানীর শাহীদবাগে গুম হওয়া এক বিএনপি নেতার বাসায় যান। ওই নেতার বোন গুম পরিবারের সংগঠন মায়ের ডাকের আহ্বায়ক। ওই খবর পেয়ে জিয়াউর রহমানের আমলে সামরিক আদালতে মৃত্যুদন্ড দেয়া পরিবারদের সংগঠন মায়ের কান্নার সদস্যরা বাসার সামনে জড়ো হন। পিটার হাসের নিরাপত্তা কর্মীরা তাকে দ্রুত বেরিয়ে আসার পরামর্শ দেন। নিরাপত্তা রক্ষীরা রাষ্ট্রদূতকে বলেন, মায়ের কান্নার সদস্যরা রাষ্ট্রদূতকে অবরুদ্ধ করতে পারেন। পিটার হাস মিটিং সংক্ষিপ্ত করে সরাসরি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। রাষ্ট্রদূত পিটার হাস তার নিরাপত্তার বিষয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাষ্ট্রদূতকে আশ^স্ত করেন যে, তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। এ নিয়ে উদ্বেগের কিছু নেই। পররাষ্ট্র মন্ত্রী টেলিফোনে আইজিপির সঙ্গে কথা বলেন। তিনি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেন। তবে মন্ত্রী এ সময় রাষ্ট্রদূতকে চলাচলের বিষয়ে সরকারকে আগাম জানালে ভাল হয় বলে মন্তব্য করেন।
সাম্প্রতিক সময়ে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে নিয়ে পিটার ডি হাসের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। তখন  ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ইমরান সুস্পষ্টভাবে বলেন যে, তিনি যদি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করে যেতেন তাহলে তার নিরাপত্তা উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হতো। পিটার ডি হাসের বিষয়টি এখন ওয়াশিংটন কিভাবে দেখছে এবং কিভাবে এর সমাধান করবে সেটাই এখন দেখার বিষয়।
এদিকে, ঢাকায় একটি বিশ^স্ত সূত্র আজকালকে নিশ্চিত করেছে যে, পিটার হাস বর্তমানে ঢাকাতে অবস্থান করলেও ছুটিতে আছেন।

 

সাপ্তাহিক আজকাল
সাপ্তাহিক আজকাল
এই বিভাগের আরো খবর